– Barrister Shajib Mahmood Alam, Advocate, Supreme Court of Bangladesh
বাংলাদেশের আইনের দৃষ্টিকোণ এবং ভাষাগত প্রয়োগের দিক মিলিয়ে চিন্তা করলে তালাক এবং ডিভোর্স একই অর্থ বহন করে। একটি আরবী শব্দ, অন্যটি ইংরেজি; দুইটির অর্থই বিচ্ছেদ বা বিবাহের অবসান।
মুসলিম বিবাহ বিচ্ছেদ
আমাদের দেশে মূলত তিন ভাবে মুসলিম বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। প্রথমত স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে তালাক, দ্বিতীয়ত স্ত্রী কর্তৃক স্বামীর নিকট হতে তালাক গ্রহণ এবং তৃতীয়ত খোলা বা উভয়ের সম্মতিতে তালাক। বাংলাদেশে বিবাহ রেজিস্ট্রারের দায়িত্ত্ব পালনকারীদের সরকার কর্তৃক নিয়োগ করা হয় তবে বেশিরভাগ সময় আমরা তাদের কাজী সাহেব বলেই সম্বোধন করি। তালাক ইসলামে স্বামীর অধিকার যার ক্ষমতা চাইলে স্ত্রীকে প্রদান করা যায়। আমার অভিজ্ঞতায় বাংলাদেশের বেশিরভাগ কাজী সাহেবরা বিয়ের সময় স্বামী যেন স্ত্রীকে তালাকের ক্ষমতা অর্পণ করেন সে বিষয়টি কাবিননামার ১৮নং কলামে লিপিবদ্ধ করে নিশ্চিত করেন এবং এর মাধ্যমে মেয়েদের তালাক গ্রহণের পথটি নিশ্চিত করেন।
যেকোন ক্ষেত্রেই তালাক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে নারীর ইদ্দত পালন বাধ্যতামূলক। সাধারণ ভাষায়, ইদ্দতের লক্ষ্য স্ত্রী তার সদ্য সাবেক হতে যাওয়া স্বামীর সন্তান গর্ভে ধারণ করেছেন কিনা তা নিশ্চিত হওয়া। স্ত্রী সন্তান সম্ভবা হলে প্রেগনেন্সির অবসান, বা সন্তান জন্ম নেয়া পর্যন্ত তালাক কার্যকর করার সুযোগ নেই।
খ্রীষ্টান এবং বিশেষ বিবাহ বিচ্ছেদ
বাংলাদেশের খ্রীষ্টান সম্প্রদায়ের নাগরিকরা এবং বিশেষ বিবাহ আইনের মাধ্যমে বিবাহিত দম্পতি ডিভোর্স একটের বিধান অনুযায়ী নির্দিষ্ট আদালতের মাধ্যমে ডিভোর্সের আবেদন করতে পারেন। তবে এসব ক্ষেত্রে ডিভোর্স কেবলমাত্র নির্দিষ্ট এবং আইনে নির্ধারিত কতিপয় কারণে প্রার্থনা করা যায়। আদালতের ব্যস্ততার উপর নির্ভর করে একটি ডিভোর্সের মোকদ্দমা নিষ্পত্তিতে ৪ মাস থেকে এক বছর লেগে যেতে পারে।
হিন্দু এবং বৌদ্ধ ধর্মে ডিভোর্স
মূলত সনাতন হিন্দু ধর্মে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক মৃত্যু ব্যতীত অবিচ্ছেদ্য। বৌদ্ধ ধর্মের অবস্থানও একই। আমাদের দেশেও এখন পর্যন্ত হিন্দু বা বৌদ্ধ বিবাহ বিচ্ছেদ আইন প্রণয়ন করা হয়নি এবং আমার অভিজ্ঞতায় অদূর ভবিষ্যতে এরকম আইন আসার সুযোগ কম বলেই মনে হয়। অর্থাৎ হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মে বিবাহিত দম্পতিরা একক বা উভয়ের ইচ্ছায়ও বিবাহ বিচ্ছেদ করতে পারেন না। যদিও কতিপয় ক্ষেত্রে হিন্দু বিবাহিত নারী পৃথক বসবাসের অনুমতি ও ভরণপোষণের জন্য আদালতের শরণাপন্ন হতে পারেন। তবে একে কোনভাবেই ডিভোর্স বা বৈবাহিক বিচ্ছেদ ভাবা যাবেনা।
Comments are closed